**রংপুর নাগরিক সমাজ(RNS) সংগঠনের নিউজ পোর্টাল rnsnews24.com এ স্বাগতম।  *** প্রতিনিধি নিয়োগ*** রংপুর বিভাগের সকল জেলা ও রংপুর জেলার সকল উপজেলায় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যোগাযোগ- 01722-882770 ।  *** সবার আগে নির্ভুল সংবাদ পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন।
শিরোনাম :
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে খুলনায় দেশীয় তামাক চাষীদের মানববন্ধন   রংপুরে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ শতাধিক চিকিৎসক নিয়ে ডক্টরস নাইট অনুষ্ঠিত জাতীয় বডি বিল্ডিংয়ে মিষ্টার বাংলাদেশ কে এই রংপুরের আহসানুল হক রংপুরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে বাড়ি দখলের চেষ্টার অভিযোগ রংপুর সিটি নির্বাচনে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী ডালিয়া উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হাজ্জাজের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলী কেন্দ্রীয় অনুমোদন পেল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রংপুর জেলা কমিটি জাল দলিল করে জমি আত্মসাৎ করার ঘটনায় লিপি খান-শিমুল ভরসাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা রংপুরে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বিশেষ আলোচনা রসিক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মিলনের নির্বাচনী ওয়ার্ড কার্যালয়ের উদ্বোধন
ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ ভবন…………..রাকিবুল হাসান রকেট

ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ ভবন…………..রাকিবুল হাসান রকেট

নিজের ইতিহাসকে অস্বীকার করে কোন জাতিই সত্যিকার অর্থে সামনে এগোতে পারেনা। মানুষের জীবনসংস্কৃতির সাথে যুক্ত বলে ইতিহাস-ঐতিহ্য একটি জাতির প্রকৃত সম্পদ। আর এই ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অনেক পুরাকীর্তি। তেমনই একটি দূর্লভ পুরাকীর্তি রংপুর টাউন হল চত্বরে অবস্থিত রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ ভবন (এখন যেটি পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরি ভবন)। অবিভক্ত বাংলার শিল্প সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র রংপুরের সমৃদ্ধ অতীত ও গৌরবময় ঐতিহ্যের একটি অনন্য নিদর্শন এই রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ ভবন। অথচ অপরিসীম ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন এই পুরাকীর্তিটি আমাদের উদাসীনতা, অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। রংপুর নগরীর তরুণ প্রজন্মের প্রায় কেউই জানেনা এর অতীত ইতিহাস। তাই চলুন একটু সংক্ষপে জেনে নেই।

১৮৯৩ সালের ২৩ জুলাই কলকাতার শোভাবাজারে ‘দি বেঙ্গল একাডেমী অব লিটারেচার’ নামে এক সাহিত্যসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮৯৪ সালের ২৯ এপ্রিল এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়-‘ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ’। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনই ছিল এই পরিষৎ-এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

রংপুরের কুণ্ডির জমিদার শ্রী সুরেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী ছিলেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর একজন সন্মানিত সদস্য। তিনিপ্রস্তাব উত্থাপন করেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর শাখা রংপুরে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। রঙ্গপুর সাহিত্য পত্রিকার এক নিবন্ধে জানা যায়, সে সময় বঙ্গীয় পরিষদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংগঠনের পরিধি বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। ১৩১১ বঙ্গাব্দের ৬ চৈত্র পরিষদের এক সভায় রংপুরেই সাহিত্য পরিষদের প্রথম শাখা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রস্তাবক সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরীকে সম্পাদক নিযুক্ত করে রঙ্গপুর শাখা সভা গঠনের জন্য পরিষৎ অনুরোধ করে।
১৩১২ বঙ্গাব্দের ১১ বৈশাখ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার রংপুর টাউন হলে তৎকালীন ড্রিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার শ্রী আশুতোষ লাহিড়ী এর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন কাকিনার রাজা শ্রী মহিমারঞ্জন রায়চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরী। তাঁরা দুজনেই আজীবন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২৮ জন সদস্য নিয়ে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ রঙ্গপুর শাখা তথা রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ-এর যাত্রা শুরু হয়। এ সময় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।


১৯১৪ (মতান্তরে ১৯১২) সালে রঙ্গপুর পাবলিক লাইব্রেরী ভবনের পশ্চিমদিকে এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল এবং রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ ভবন নির্মিত হয়। হলের দুই পাশে দুটি কক্ষ নির্মিত হয়। এর এক পাশে ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে সাহিত্য পরিষৎ ও এর সংগ্রহশালা তৈরি হয়।
রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ-এর কর্মকাণ্ড শুধু সাহিত্য চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯০৬ সাল থেকে প্রতি তিন মাসে প্রকাশ করা হত রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা। পত্রিকাটিতে উত্তরবঙ্গের ভাষাতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, বিবিধ ঐতিহাসিক তত্ত্ব এবং গ্রামীণ অপ্রকাশিত দুষ্প্রাপ্য পুঁথির বিবরণ প্রকাশিত হত। কার্যত পত্রিকাটি একটি গবেষণা পত্রিকায় পরিণত হয় এবং দুই বাংলায় তা অমূল্য সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছে। পত্রিকাটি ধারাবাহিকভাবে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে এবং এরপর ধারাবাহিকভাবে না হলেও একসাথে কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ-এর আরেকটি যুগান্তকারী প্রচেষ্টা হচ্ছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রত্ন সম্পদের সংগ্রহশালা স্থাপন। চিত্রশালা যেমন সমৃদ্ধ ছিল তেমনি ছিল প্রাচীন পুঁথি ও ঐতিহাসিক নিদর্শন, বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তির সংগ্রহশালা। রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ-এর সাথে সম্পৃক্ত স্বনামধন্য গুণীজনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশিষ্ট ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদের রাখাল দাস বন্দোপধ্যায়, আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্র, রমেশচন্দ্র দত্ত, গুরুদাস মুখোপাধ্যায়,মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি,রজনীকান্ত গুপ্ত, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, সূর্যকুমার প্রমূখ।
বর্তমানে খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের কার্যালয় ভবনটি। বহু ফাটলে জরাজীর্ণ ভবনটিতে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় বারান্দাসহ বিভিন্ন অংশে। বিলীন হয়ে যাওয়ার মুখোমুখি হয়ে ভবনটি যেন আমাদের অযত্ন আর অবহেলার জ্বলন্ত নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ বহু আগেই এই পূরাকূর্তিটিকে ন্যাশনাল হেরিটেজ সাইট ঘোষনা করা উচিৎ ছিল।
গৌরবময় ইতিহাস আর সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে আপন করে নিজেদের শেকড়কে না জানার চেষ্টা করলে জাতি হিসেবে আমাদের আগাছা বা পরগাছা হয়েই থাকতে হবে। তাই রংপুরের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন হুমকির মুখে থাকা শতবর্ষী রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী ভবনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি। অনন্য এই স্থাপনাকে ন্যাশনাল হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা এবং সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবীতে একজোট হই।

আগামী শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর টাউন হল চত্বরে একত্রিত হয়ে আমরা এই দাবি আদায়ের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। নিজেদের ঐতিহ্যকে জাগরুক রাখার এই প্রচেষ্টায় সকলের আন্তরিক ও সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করছি।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন Masud Rana ও Riyadh Anwar Shubho ভাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ]

সংবাদটি সবাইকে জানাতে আপনার স্যোস্যাল অ্যাকাউন্ট দিয়ে শেয়ার করুন




©২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। আর এন এস নিউজ ২৪.কম।