কোভিড আক্রান্তের সমস্যা নিঃসঙ্গতা
রানা মাসুদ
কোভিড আক্রান্ত রোগীর সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানেন? আমার দৃষ্টিতে নিঃসঙ্গতা। নিঃসঙ্গতা একজন সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে তোলে সেখানে প্রাণঘাতি কোভিড 19 আক্রান্ত একজন মানুষের কী অবস্থা হয় তা সহজেই অনুমেয়। সবাই তো আর সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভক্ত নয়। আমি যেমন নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় চুটিয়ে মুভি দেখছি, কবিতা লিখছি,পড়ছি , ফেসবুক ও বন্ধুদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে বদমাশি করে আর দিনমান কল রিসিভ করে সময় কাটাচ্ছি।
আমি টেস্টের আগে থেকেই আলাদা রুমে একা আছি; যাকে আইসোলেশনে থাকা বলা যায়। যেদিন রিপোর্ট পেলাম সেদিন জ্বরের প্রকোপ খুব বেড়েছিল। ঘুম আসছিল না। মাঝরাতে না চাইতেও মনের অলিন্দে অজানা আতঙ্ক ঘুরঘুর করতে লাগে। উস্তাদ ভীমসেন জোশীর ধ্রুপদীতে রাতের অন্ধকারে ভালোলাগা খুঁজি। ঘুম আসেনা। নানান চিন্তার শেকড় ছড়াতে চায়।
দিনের বেলাটা আরও অসহ্য ঠেকে। কাজের মানুষ মানে কামলা আরকি। দিনরাত কাজের পেছনে, সাথে থাকি। সে মানুষ বিছানায় থাকি কী করে? খুব অসহ্য লাগে দিন। মনকে তৈরি করলাম ছুটির আমেজে। যেন ছুটিতে- বিশ্রামে আছি। মগজে ব্যবসা কি বৈষয়িক কোন চিন্তাই নিচ্ছিলাম না। গভীর কী হালকা কোন আঁতেল ভাবনাও না। জাস্ট চিল।
তো চিল বললেই তো আর চিল থাকা যায়না। আসে বস। চিন্তা আসে। জীবন-সংসার ডাকে, টানে,মানে ক্যাচকি লাগায়। কার কার জন্য যেন বুকের মাঝে মোচড় মারে। বৈষয়িক হ্যাপা তো কম না। ওসব পরিচালনাও কম ডিফিকাল্ট নয়।
ঘুমের ওষুধ খেতে পারতাম না। তা ঘুমের দেবতার দর্শনে ঘুম কেনা শুরু করলাম। এখন সে ঘুম দিনেও টালায়। মন্দের ভালো হলো দিনেও ঘুমা শুরু করেছি। দিনে ঘুম আমার মত কামলার রাজকীয় বিলাস!
দরজার ওপাশ থেকে যখন ওয়ান টাইম পটে খাবার আসে তখন প্রথমে মনটা অচ্ছুৎ লাগতো। এখন সয়ে গেছে। খাবার স্বাদ কী গন্ধ,রুচি আছে না নেই ওসব ভাববার টাইম দেইনা মনকে। পানি এক ঢোক করে নিয়ে গিলে হলেও খেতে হবে বস এই মানসিকতায় চলি।
শরীরের বিষ-ব্যথা একটা বড় সমস্যা। এর সাথে আবার জ্বর বেড়ে যাওয়ায় পিটুইটারি গ্রন্থিতে কিছু ম্যাসেজ যায়। হাইপোথ্যালামাস ডেপোমিন, অক্সিটোসিন আর ভেসোপ্রেসিন মিলিত একটা শক্তি জীবনের প্রতি গভীর প্রেমের জন্ম দেয়। নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর জন্ম দেয় জীবনের প্রতি আরও গভীর প্রেমের। মাথায় খেলা করে অদ্ভুত কিছু রিদম। এই রিদম কাজে লাগাই মনকে অন্যদিকে ডাইভার্ড করার জন্য শায়েরী লিখতে গিয়ে।
বেশি কপচাপছি। ওই এটাও একাকীত্বের জন্য। তাই কোভিড আক্রান্ত রোগীদের আলাদা থাকার সময় তার বা তাদের সময় কাটানো বা মানসিক বিনোদনের দিকে খেয়াল রাখা খুব দরকার বলে মনে হচ্ছে। সেইসাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যাবতীয় ব্যবস্থা তো সর্বাগ্রে চলবেই।
ছয় দিন পার হচ্ছে আজ। সাত দিনের পর থেকে নাকি নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। দিলে দেবে। মরার আগে মরি কেন মানে দেখা না দেবার আগে ভাবি কেন? মানুষের ভেতরের শক্তি অত্যন্ত বড় শক্তি। ভেতর থেকে শক্তি আনতে সবে ইনশাআল্লাহ আমি কোভিডের সাথে লড়াইয়ে সারভাইভ করবো।
আর হ্যাঁ অনুগ্রহ করে নিরাপদ থাকুন। সামান্য উপসর্গ দেখলেই টেস্ট করুন। টেস্টের রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকুন। তারপর নেগেটিভ হলে বের হোন। আপনার অসচেনতা আপনার পরিবার ও শহরকে তথা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে।(অলরেডি তা হবার আর বাকি কোথায়)।
লেখক;
রানা মাসুদ ( করোনা পজেটিভ)
সাহিত্যকর্মী, রংপুর।