রেজাউল করিম জীবন॥ যতইদিন যাচ্ছে ততই শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে রংপুরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে। ঝুঁকি এড়াতে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়েই যান চলাচল করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে রংপুরের তাপমাত্র ছিলো ১৬ থেকে ১৭। রংপুরে রবিবার (৬ ডিসেম্বর) ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। প্রায় সারাদিন রোদের লুকোচুরি। তবে এখনো জেঁকে বসেনি শীত। মধ্যরাতের পর বাড়তে থাকে শীত থাকে সকাল নয়টা পর্যন্ত। কিন্তুসেই সাথে পড়ছে ঘন কুয়াশা,আর কুয়াশার কারনেই ভোরে যান চলাচল করাটা হয়েছে খুবেই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তাই চালকরা হেডলাইট জ্বালিয়েই চলাচ্ছে গাড়ি। অপর দিকে তবু ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘনকুয়াশার মধ্যে ঘর থেকে কাজের জন্য বের হতে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ।
ট্রাক ড্রাইভার আবু মিয়া (৫০) বলেন, হামার তো করার কিছু নাই,কিসের শীত আর কিসের কুয়াশা হামাকতো গাড়ি চালাতে হবে। তবে কুয়াশার কারনে গাড়ি চালাতে হয় হেড লাইট জালিয়ে তার পরও কষ্ট হয়। কূয়াশার কারনে রাস্তা দেখা যায় না। তারপর চালাতে হয়।
নাইট কোচ ড্রাইভার চান্দু হোসেন (৪০) বলেন, বাবা আমাদেরকে জীবন বাচার তাগিদে গাড়ি চালাতে হয় কিছু করার নাই। কুয়াশা হলে ও আমাদেরকে গাড়ি চালাতে হবে।
হিমের পাহাড় হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান বলে উত্তরের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের দাপট এমনিতেই একটু বেশি। আগেভাগে শীত আসা, দেরিতে যাওয়া আর বেশি তীব্রতার দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকেই।
গুলাল বুধাই এলাকার দিনমজুর আজাহারুল ইসলাম (৪৫) জানান, হামরাতো গরিব মানুষ, হামার আবার শীত কিসের, দিনে কাজ না করলে রাতে খাওয়া হবে না তাই শীত হলেও মাঠে কাজ করতে হবে। শীতে মাঠে কাজ করতে কষ্ট হলেও করতে হবে। একদিন কাজ না করলে আর একদিন উপস থাকতে হবে। আমাদের দিকে কেউ তাকায় না।
একই ভাবে বললেন বোতলা এলাকার আলমগীর হোসেন(৩৫)সকাল থেকে অন্যের জমিতে কাজ করে মজুরী পাই ৩৫০ টাকা তাকে দিয়ে টাল ডাল কিনি না শীতের কাপর কিনি ভাই , হামার ভিতি কেউ তো দেখেনা। এদিকে শীত বিত্তবানদের কাছে উপভোগ হলেও ছিন্নমুল ও নি¤œআয়ের মানুষের কাছে দূর্বিসহ। সারাদিন নানা কাজ শেষে রেলওয়ে স্টেশন ,খোলা মাঠ বাসা বাড়ি ও অফিস আদালত বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমুল মানুষরা শীত বস্ত্রের অভাবে মানবতার জীবন-যাপন ও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। চিরা ক্যাথা আর কাপর গায়ে দিয়ে রাত কাটাচ্ছেন অনেকেই। শনিবাার সকালে এমনি দৃশ্য রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে চোখে পড়ার মত। রংপুর স্টেশনে শুয়ে থাকা ছিন্নমুল মানুষ রহিম উদ্দিন (৬৫) বললেন বাবারে হামার তো কেউ নেই ,হামি সারাদিন মাসুষের দারে দারে গিয়ে ভিক্ষা করি আর রাতে বেলা স্টেশনে ঘুমাই। রাতে খুব শীত লাগে ,শীত লাগলে কি করমু বাবা ।
রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড রেজাউল করিম রাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গরিব অসহায় ও ছিন্নমুল মানুষরা যাতে কোন ধরনে শীতে কস্ট না পায় সেদিকে লক্ষ করে আমারা আমাদের দলের পক্ষ থেকে শীর্তাত মানুষদের জন্য শীত বস্ত্র ব্যবস্থা করেছি।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তবে এবার প্রথম মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি।এরপর আরো কিছু শৈত্যপ্রবাহ আমরা পাবো ।
রংপুরে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের সর্বাত্মক সহযোগীতার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে শীতার্ত মানুষেন পাশে দাড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহব্বান জানান তিনি।